হাফিজুর রহমান শিমুলঃ
সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টরের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্ণীতির বিস্তর অভিযোগ চাউর হয়ে উঠেছে। প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট থেকে মোটা অংকের টাকা বাঁচিয়ে নিম্ন মানের প্রশিক্ষণ উপকরণ প্রদান। প্রশিক্ষনার্থীদের বাজেট থেকে জনপ্রতি গায়েব করা হচ্ছে ৪২৫ টাকা প্রায়। তিনি একই সাথে কোর্স কডিনেটর আবার প্রশিক্ষকের দ্বায়িত্ব পালন করছেন। তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী।
তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, চতুর্থ প্রাথমিক উন্নয়ন কর্মসূচি (পিডিবি-৪)-এর আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে সারাদেশের ন্যায় সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে ৩ দিনব্যাপী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য শিক্ষাক্রম বিস্তারণ প্রশিক্ষণ গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২৩ থেকে শুরু হয়েছে। এই প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট থেকে মোটা অংকের টাকা বাঁচিয়ে নিম্ন মানের প্রশিক্ষণ উপকরণ প্রদান, ক্ষমতার অপব্যবহার করা এবং অনিয়ম ও দুর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে কালিগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর আনারুল কবীর এর বিরুদ্ধে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বাজেট বিভাজন থেকে জানা যায়, প্রতি প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য তথ্যপত্র,কলম,প্যাড,নেমকার্ড, পেন্সিল, ইরেজার এর জন্য বরাদ্দ ৫০০টাকা, ও প্রতি প্রশিক্ষনার্থীদের জন্য ব্যাগ বাবদ ৫০০ টাকা মোট ১০০০ টাকাসহ সন্মানী ও লাঞ্চ বাবদ বরাদ্দ আছে। কালিগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে মোট ২৪ ব্যাচ প্রশিক্ষণ হবে। প্রতি ব্যাচে প্রশিক্ষনার্থী থাকবে ৩০ জন শিক্ষক। একাধিক শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও সরজমিনে যেয়ে দেখা যায়, একটি তথ্যপত্র যার মুল্য সর্বোচ্চ ১৮০/২০০ টাকা, ১৫ টাকা মুল্যের একটি কলম, ৫ টাকা মুল্যের একটি নেমকার্ড, ২০/৩০ টাকা মুল্যের একটি ডায়েরি এবং প্রশিক্ষনার্থীদের একটি করে ব্যাগ সরবরাহ করা হচ্ছে যার সর্বোচ্চ বাজারমুল্য ৩০০ টাকা। যা সর্বমোট গিয়ে দাঁড়ায় ৫৫০টাকা প্রায়। কিন্তু এ সব বাবদ বরাদ্দ আছে ১০০০ টাকা। ইন্সট্রাক্টর দেওয়া হিসাব মতে, তথ্যপত্র বইটি ৬২পৃষ্ঠা এপিঠ/ ওপিঠ ধরে ১২৪ পৃষ্ঠা, দুইপিঠ ফটোকপি করলে পড়ে ৩ টাকা। সেখানে উনি ১২৪ পৃষ্ঠা ৩ টাকা ধরে হিসাব দিচ্ছেন। তাছাড়া ভ্যাট বাবদ ৯০ টাকা বদ দিচ্ছেন কিন্ত ভ্যাট দিচ্ছেন মোট ৭২০ টাকা, সে হিসাবে শিক্ষক প্রতি ২৪ টাকা করে আসে এর থেকে তিনি আয়কর প্রদান করছেন শিক্ষক প্রতি ২৪ টাকা। তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রতি প্রশিক্ষনার্থীদের বাজেট থেকে গায়েব করা হচ্ছে ৪২৫ টাকা প্রায়। ২৪ ব্যাচে মোট প্রশিক্ষনার্থী থাকবে ৭২০ জন। যাদের বাজেট থেকে গায়েব করা হবে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা। এছাড়াও তিন দিনব্যাপী কোর্স শেষে প্রশিক্ষনাথীদের কে যে সনদপত্র প্রদান করা হচ্ছে তা ৬৫ গ্রাম এ-ফোর সাইজের কাগজ হওয়ায় উপজেলা শিক্ষা অফিসার ৪র্থ ব্যাচের সমাপনী অনুষ্ঠানে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে শিক্ষকদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। চতুর্থ ব্যাচে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী শিক্ষক নেতারা এ সকল অনিয়মের প্রতিবাদ জানালে ইন্সট্রাক্টর আনোয়ারুল কবীর তাঁদেরকে উপকরণ বাবদ ১০০ টাকা এবং ব্যাগ বাবদ ১০০ টাকা অতিরিক্ত প্রদান করেন। কিন্ত পঞ্চম ব্যাচ থেকে তিনি পূর্বের মতো অনিয়ম করেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া প্রশিক্ষকদ্বয়ের ক্ষেত্রেও নীতিমালা অমান্য করা হচ্ছে। তিনি একই সাথে কোর্স কডিনেটর আবার প্রশিক্ষকের দ্বায়িত্ব পালন করছেন। যার কারণে একই ব্যাচ থেকে দুই রকম সন্মানী গ্রহণ করছেন। ফলে এক সাথে দুই রকম সরকারি সুবিধা গ্রহণ করা যাবে কিনা এ নিয়ে শিক্ষক ও সচেতন মহলে ধ্রুবজালের সুষ্টি হয়েছে। তিনি সব সময় নিজেকে সৎ অফিসার হিসাবে জাহির করে থাকেন। কিন্তু তার এহেন কর্মকান্ডে শিক্ষকদের মাঝে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব বিষয়ে প্রশিক্ষনার্থীরা কথা বললে ইন্সট্রাক্টর তা না শুনে রেগে গিয়ে শিক্ষকদের বিভিন্ন সমস্যায় পড়বেন বলে হুমকি দেন। এ বিষয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর আনারুল কবীর এর নিকট কথা হলে তিনি বলেন, ফোনে এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব না, দেখা করে কথা বলেন বলে মোবাইলের সংযোগ কেটে দেন।
এদিকে স্থানীয় প্রশাসন ও উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট শিক্ষকরা তাদের বাজেটের সঠিক প্রাপ্যটুকু বুঝে পাওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।
Leave a Reply